leepu-car-designer-bangladesh-final

তোমরা কি জানো, পুরনো গাড়ি দিয়ে নতুন সুপারকার বানানো যায়? এটা ঠিকই শুনেছ! বাংলাদেশের নিজামউদ্দিন আউলিয়া, যিনি ‘লিপু’ নামে পরিচিত, এমনই একজন মানুষ। তিনি পুরনো, প্রায় ভাঙাচোরা গাড়িকে নতুন করে সাজিয়ে সুপারকার বানিয়ে ফেলেন। তার কাজ দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়!

লিপুর শৈশব

লিপু ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার গাড়ির প্রতি অদম্য আগ্রহ ছিল। যখন তিনি ছোট ছিলেন, তখন থেকেই তিনি গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবতেন, ‘আমি যদি একদিন নিজের গাড়ি বানাতে পারতাম!’ তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় কিশোর বয়সে। ১৬ বছর বয়সে তার বাবা তাকে একটি মাজদা গাড়ি উপহার দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার গাড়ির প্রতি ভালোবাসার যাত্রা।

প্রথম গাড়ি তৈরি

লিপুর প্রথম গাড়ি তৈরি করার গল্পটা বেশ মজার! ১৯৯৪ সালে, যখন তার বয়স মাত্র ২৬ বছর, তিনি ল্যাম্বরগিনি কাউন্টাচের মতো একটি গাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু এখানে একটি চমক আছে – তিনি তার গাড়ির বডি সাজিয়েছিলেন পোস্টার দিয়ে! যদিও তার হাতে সেই সময় ভালো বডিওয়ার্ক বা পেইন্টিং করার সরঞ্জাম ছিল না, তবু তিনি তার সৃজনশীলতা দিয়ে একটি সাধারণ গাড়িকে অসাধারণ করে তুলেছিলেন। এটি ছিল তার প্রথম প্রচেষ্টা, যা তাকে গাড়ি তৈরি করার পথে অনেক দূর এগিয়ে দেয়।

ঢাকায় ফিরে আসা

লিপু বিদেশে কিছু সময় কাটানোর পর ঢাকায় ফিরে আসেন এবং নিজের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি পুরনো গাড়িগুলোকে নিয়ে কাজ শুরু করেন, সেগুলোকে নতুন রূপ দেন। ২০০০ সালে তিনি মাত্র ২,৫০০ ডলার খরচ করে একটি পুরনো ডাইহাটসু শ্যারেড গাড়িকে ল্যাম্বরগিনি ডায়াব্লোর মতো করে তৈরি করেন।

‘স্বাধীনতা ৭১’ এবং বিশ্বব্যাপী পরিচিতি

লিপু তার সৃষ্টিশীল কাজ দিয়ে কেবল বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি পান। ২০০২ সালে তিনি একটি ফেরারি গাড়ির নকল তৈরি করেন, যার নাম দেন ‘স্বাধীনতা ৭১’। তার এই গাড়ি তৈরি করার পদ্ধতি ছিল খুবই চমকপ্রদ। ঢাকার রিকশা তৈরির জন্য ব্যবহৃত ধাতব শীট দিয়ে তিনি এই গাড়ির বডি তৈরি করেন। পরে এই গাড়ি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর প্রশংসা পায় এবং লিপু ‘বাংলাদেশি ফেরারি’ নামে পরিচিত হন।

photo-collage-car-design
photo-collage-car-designer

Image Source: facebook.com/carbikeloversbangladesh

বাংলাদেশে ফিরে আসা এবং ‘সুরুজ’ গাড়ি নির্মাণ

২০১১ সালে দেশে ফিরে লিপু ‘সুরুজ’ নামে একটি গাড়ি নির্মাণ করেন, যা তেল, গ্যাস, এবং বিদ্যুতেও চলতে সক্ষম। নিজের দাদার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এ নামকরণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি এবং নতুন অধ্যায়

২০১৩ সালে লিপু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বসবাস শুরু করেন। তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে অভিবাসনের সুবিধা দেয়। তার কাজের প্রতি ভালোবাসা, ধৈর্য্য এবং সৃজনশীলতা তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।

তোমাদের জন্য লিপুর অনুপ্রেরণা

লিপু আঙ্কেলের গল্পটি তোমাদের জন্য একটি বিশেষ অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন যে ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য্য, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে যেকোনো কিছু সম্ভব। তুমি যদি কিছু ভালোবাসো এবং সেটি করার জন্য চেষ্টা কর, তবে একদিন তুমিও সফল হবে। লিপু আঙ্কেলের মতো তোমারও স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পুরনো জিনিসগুলোকে নতুন করে তৈরি করার মতো সৃজনশীলতা তোমাদের মধ্যেও রয়েছে।

তোমাদের মধ্যে যারা নতুন কিছু তৈরি করতে ভালোবাসো, তারা লিপু আঙ্কেলের গল্প থেকে শিখতে পারো। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে কখনো হাল ছাড়বে না। হয়তো একদিন তুমিও লিপুর মতো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে!

Leave a Comment

Your email address will not be published.

Select the fields to be shown. Others will be hidden. Drag and drop to rearrange the order.
  • Image
  • SKU
  • Rating
  • Price
  • Stock
  • Availability
  • Add to cart
  • Description
  • Content
  • Weight
  • Dimensions
  • Additional information
Click outside to hide the comparison bar
Compare